
পেহেলগাম হামলার পরিণতি
জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে ২২ এপ্রিল ২০২৫-এর সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত ও বহু আহত হওয়ার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনা নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। এই ঘটনার জেরে ভারতীয় স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম ফ্যানকোড পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল) ২০২৫-এর সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়েছে। পিএসএলের প্রথম ১৩টি ম্যাচ সম্প্রচারের পর ফ্যানকোড তাদের ওয়েবসাইট ও অ্যাপ থেকে সমস্ত পিএসএল সামগ্রী সরিয়ে ফেলেছে, যার মধ্যে হাইলাইটস ও ম্যাচের ভিডিও রয়েছে।
পাকিস্তানে আটকে ভারতীয় ক্রু
পিএসএল সম্প্রচারে নিয়োজিত ১২ জন ভারতীয় ক্রু সদস্য এবং একজন প্রযোজক পাকিস্তানে আটকে পড়েছেন। ভারত ও পাকিস্তানের পারস্পরিক ভিসা বাতিলের নির্দেশের ফলে তারা দেশ ছাড়বেন কি না, তা নিয়ে দ্বিধায় রয়েছেন। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) জানিয়েছে, এই ক্রুদের বিশেষ ভিসার কারণে তাদের উপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর নাও হতে পারে। পিসিবির এক কর্মকর্তা আইএএনএস-কে বলেছেন, বিকল্প ব্যবস্থার পর ২৫ এপ্রিলের মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে, পাঁচজন ক্রু সদস্যের সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসবাসের অনুমতি থাকায় তারা ভারতে ফিরবেন না এবং নিষেধাজ্ঞা তাদের প্রভাবিত করবে না।
সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষাপট
পেহেলগামে হামলার দায় স্বীকার করেছে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ), যা পাকিস্তান-ভিত্তিক নিষিদ্ধ সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার সহযোগী। এই হামলা, যা ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর কাশ্মীরের সবচেয়ে মারাত্মক ঘটনাগুলির একটি, ভারতে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। ভারতীয় সরকার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে মদত দেওয়ার অভিযোগ তুলে কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ইন্দাস জল চুক্তি স্থগিত করা, অটারি-ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ এবং পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা বাতিল। এই ঘটনার প্রতিবাদে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স ও সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের মধ্যে আইপিএল ম্যাচে খেলোয়াড়রা কালো ব্যাজ পরে এক মিনিট নীরবতা পালন করেছেন।
ক্রিকেটে রাজনৈতিক প্রভাব
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক শত্রুতার কারণে দ্বিপাক্ষিক ক্রিকেট সিরিজ ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার পর থেকে বন্ধ। বর্তমানে দুই দেশ শুধু আইসিসি টুর্নামেন্টে, যেমন বিশ্বকাপ বা এশিয়া কাপে মুখোমুখি হয়। ভারতীয় ক্রিকেট নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের (বিসিসিআই) সহ-সভাপতি রাজীব শুক্লা পুনরায় নিশ্চিত করেছেন যে ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সিরিজে অংশ নেবে না। পিএসএল সম্প্রচার বন্ধের ফলে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের আর্থিক ক্ষতি হবে, কারণ ভারতের বিশাল ক্রিকেট দর্শক বাজারে বিজ্ঞাপন ও স্পনসরশিপ থেকে আয় কমে যাবে।
ভবিষ্যৎ প্রভাব
পিএসএল সম্প্রচার বন্ধ এবং ভারতীয় ক্রুদের অনিশ্চয়তা ভারত-পাকিস্তান ক্রীড়া সম্পর্কের জটিলতাকে তুলে ধরে। যদিও কিছু ভারতীয় সমর্থক ফ্যানকোডের সিদ্ধান্তকে জাতীয় সংবেদনশীলতার প্রতি সম্মান হিসেবে দেখছেন, অন্যরা মনে করেন এটি দুই দেশের মধ্যে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ের উপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে। পিসিবি এখনো এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি, তবে পাকিস্তানে আটকে থাকা ক্রুদের পরিস্থিতি সমাধানের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা খোঁজা হচ্ছে, যার মধ্যে জিম্বাবুয়ে, দক্ষিণ আফ্রিকা বা মালয়েশিয়া থেকে ক্রু নিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে। এই ঘটনা ক্রিকেটে রাজনীতির প্রভাব এবং দুই দেশের মধ্যে চলমান উত্তেজনার প্রতিফলন।