
মিরাজের ঐতিহাসিক কীর্তি
৩০ এপ্রিল ২০২৫, চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে মেহেদী হাসান মিরাজ টেস্ট ক্রিকেটের ১৪৮ বছরের ইতিহাসে এক বিরল কীর্তি গড়েন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের তৃতীয় দিনে তিনি প্রথমে ১০৪ রানের সেঞ্চুরি (১৬২ বল, ১১ চার, ১ ষটকার) করেন, তারপর দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ উইকেট (৫/৩২) নিয়ে বাংলাদেশকে ইনিংস ও ১০৬ রানের জয় এনে দেন। এটি টেস্টে একই দিনে সেঞ্চুরি ও ৫ উইকেটের দ্বিতীয় ঘটনা, প্রথমটি ইয়ান বোথামের ১৯৮৪ সালে।
বোথামের সঙ্গে মিরাজ
১৯৮৪ সালে ওয়েলিংটনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ইয়ান বোথাম প্রথমে ৫ উইকেট (৫/৭৩) নেন, তারপর ১৩৮ রানের সেঞ্চুরি করেন, কিন্তু ম্যাচ ড্র হয়। মিরাজ এই কীর্তি পুনরাবৃত্তি করেন, তবে জয় নিয়ে। তিনি দিনের শুরুতে ১৬ রানে ব্যাটিংয়ে নেমে ৮৮ রান যোগ করেন, তানজিম হাসান সাকিব (৪১) ও হাসান মাহমুদের (০) সঙ্গে জুটি গড়ে। দ্বিতীয় সেশনে সেঞ্চুরি পূর্ণ করার পর, তৃতীয় সেশনে অফ-স্পিনে জিম্বাবুয়েকে ১১১ রানে গুটিয়ে দেন। X-এ @somoytv মিরাজকে “ম্যাচের নায়ক” বলে গৌরবান্বিত করে।
মিরাজের অলরাউন্ড দাপট
মিরাজের সেঞ্চুরি বাংলাদেশকে ৪৪৪ রানে নিয়ে যায়, যা জিম্বাবুয়ের ২২৭ রানের উপর ২১৭ রানের লিড দেয়। তাঁর ৫ উইকেট, তাইজুল ইসলামের ৩/৪২ এবং নাঈম হাসানের ১/৩৪ জিম্বাবুয়ের দ্বিতীয় ইনিংসকে ধ্বংস করে। মিরাজ এই ম্যাচে বাংলাদেশের তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে একই টেস্টে সেঞ্চুরি ও ৫ উইকেটের কীর্তি গড়েন, সাকিব আল হাসান এবং সোহাগ গাজীর পথে। তিনি ৫৩ টেস্টে ২০০০ রান ও ২০০ উইকেট পূর্ণ করেন, সাকিবের ৫৪ ম্যাচের রেকর্ড ভেঙে দ্রুততম বাংলাদেশি হন।
ম্যাচের গতিপথ
বাংলাদেশ প্রথম দিনে তাইজুলের ৬/৪৪ এবং তানজিমের ২/৫৮-এ জিম্বাবুয়েকে ২২৭ রানে গুটিয়ে দেয়। দ্বিতীয় দিনে সাদমান ইসলামের ১২০ এবং মিরাজের অপরাজিত ৭৬ বাংলাদেশকে ৪০৪/৮-এ নিয়ে যায়। তৃতীয় দিনে মিরাজ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন, তানজিম ৮০ বলে ৪১ রান করেন, এবং হাসান মাহমুদ ৫ বল টিকে মিরাজকে সমর্থন দেন। জিম্বাবুয়ের দ্বিতীয় ইনিংসে মিরাজের ৫ উইকেট, বিশেষ করে বেন কারানের (৪৬) আউট, জয় নিশ্চিত করে। X-এ @ekhon_tv মিরাজের “ডাবল ম্যাজিক” উদযাপন করে।
বোথামের উত্তরাধিকার
ইয়ান বোথাম ১০২ টেস্টে ৫ বার সেঞ্চুরি ও ৫ উইকেটের কীর্তি গড়েন, যা টেস্টে রেকর্ড। তাঁর ১৯৮৪ সালের ওয়েলিংটন কীর্তি, যেখানে তিনি ৫ উইকেটের পর ১৩৮ রান করেন, প্রথম দিনে ডাবল ছিল। মিরাজ এই বিরল তালিকায় ২৭তম ক্রিকেটার হিসেবে যোগ দেন, কিন্তু তিনি এটি একই দিনে করেন, বোথামের পর দ্বিতীয়। মিরাজের জয়ের অবদান তাঁকে বোথামের উপরে রাখে, কারণ ১৯৮৪-এর ম্যাচ ড্র হয়েছিল। X-এ @Cricfrenzylive মিরাজের সেঞ্চুরিকে “লড়াকু” বলে প্রশংসা করে।
বাংলাদেশের সম্মান
সিলেটে প্রথম টেস্টে ৩ উইকেটে হারের পর বাংলাদেশ সমালোচনার মুখে পড়ে। মিরাজ, যিনি সিলেটে ৫/৫০ নিয়েছিলেন, চট্টগ্রামে ব্যাট ও বলে দলকে সিরিজ ড্র করান (১-১)। তাঁর ১০৪ রান ও ৫ উইকেট তাঁকে ম্যাচ ও সিরিজের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার এনে দেয়। এই কীর্তি মিরাজকে বিশ্বের ২৬তম ক্রিকেটার করে, যিনি ২০০০ রান ও ২০০ উইকেট পূর্ণ করেন, রবীন্দ্র জাদেজার সঙ্গে যৌথভাবে চতুর্থ দ্রুততম (৫৩ ম্যাচ)। চট্টগ্রামের এই জয় বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায় রচনা করে।