ফুটবলের সবচেয়ে মর্যাদার ও আলোচিত পুরস্কার ব্যালন ডি’অর। ২০২৪ সালে কার হাতে উঠতে যাচ্ছে এই মহার্ঘ্য পুরস্কার? ইউরোপিয়ান লিগগুলি শেষ হতেই সবচেয়ে বেশি চর্চা হচ্ছে ব্রাজিলিয়ান তারকা ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের নাম নিয়ে। তাকে নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন স্বদেশি বেশ কয়েকজন সাবেক তারকাও।
গত জুনের প্রথম সপ্তাহেই ডি’অর এবং ভিনিকে নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেন রিভালদো। এরপর এই তালিকায় যোগ দেন রোনালদো নাজারিও। কয়েক সপ্তাহ আগে নেইমারও ভিনিসিয়ুসের প্রশংসা করেন। তারা সবাই আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেছেন যে, ভিনিসিয়ুস এই পুরস্কার জিততে পারেন।
কোপা আমেরিকার প্রভাব
চলমান কোপা আমেরিকার কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে ছিটকে পড়েছে ব্রাজিল। ম্যাচটিতে নিষেধাজ্ঞার কারণে খেলতে পারেননি ভিনিসিয়ুস। দলের এমন বিদায়ের পরও কি জোর গলায় বলতে পারবেন ব্রাজিলের এই কিংবদন্তিরা?
২০২৪ সালের ব্যালন ডি’অর ঘোষণা করা হবে ২৮ অক্টোবর। তবে পুরস্কারের লড়াইয়ে যারা থাকবেন, তাদের নিজেদের প্রমাণ করার সুযোগ শেষ হয়ে যাচ্ছে এ মাসেই। সাধারণত ব্যালন ডি’অরের বিবেচ্য সময় ১ বছর, এ দফায় যার সময় ২০২৩ সালের ১ আগস্ট থেকে ২০২৪ সালের ৩১ জুলাই।
পারফরম্যান্স ও মূল্যায়ন
ব্যালন ডি’অরের জন্য নির্বাচিত সাংবাদিকরা তিনটি বিষয় বিবেচনায় নেন: সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড়ের পারফরম্যান্স, দলের সাফল্য এবং আচরণ ও ফেয়ার প্লে। প্রথম দুটিতে এ মৌসুমে ভিনিসিয়ুস এগিয়ে। কিন্তু তৃতীয় মানদণ্ডে নেতিবাচক পয়েন্ট যুক্ত হতে পারে তার নামে। মৌসুমজুড়ে তিনি যেমন বর্ণবাদের শিকার হয়েছেন, তেমনি আক্রমণাত্মক প্রতিক্রিয়ার কারণে সমালোচিতও হয়েছেন।
ভিনিসিয়ুসের চ্যালেঞ্জ
গ্রুপ পর্বে দুটি হলুদ কার্ড দেখায় উরুগুয়ের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে মাঠে নামতে পারেননি ভিনিসিয়ুস। প্যারাগুয়ের বিপক্ষে করা দুটি গোলের স্মৃতি সঙ্গে নিয়ে টুর্নামেন্ট শেষ করতে হয়েছে নিষেধাজ্ঞার মধ্যে থেকে। ক্লাব পর্যায়ের সাফল্যে এগিয়ে গেলেও জাতীয় দলের সঙ্গে মহাদেশীয় টুর্নামেন্টের ব্যর্থতা কিছুটা হলেও পিছিয়ে দিচ্ছে ভিনিকে।
অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বী
এবারের ব্যালন ডি’অরের অন্যতম দাবিদার ভিনিরই সতীর্থ ও বন্ধু জুড বেলিংহাম। ২১ বছর বয়সি ইংলিশ মিডফিল্ডার রিয়ালে যোগ দিয়ে প্রথম মৌসুমেই রীতিমতো হইচই ফেলে দিয়েছেন। দলগত সাফল্যের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে মৌসুম শেষ করেছেন ৪২ ম্যাচে ২৩ গোল করে ও ১৩ গোল করিয়ে। ব্যালন ডি’অর ভোটে বেলিংহামের পক্ষে কাজ করবে ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপও।
এমবাপ্পে ও রদ্রির সম্ভাবনা
বেলিংহাম বা ভিনিসিয়ুসই প্রধান দাবিদার নন, তাদের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী হতে যাচ্ছেন আগামী মৌসুম থেকে তাদেরই সতীর্থ হতে চলা কিলিয়ান এমবাপ্পে। পিএসজিতে শেষ মৌসুমে লিগ জিতেছেন এমবাপ্পে, খেলেছেন চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালেও। প্যারিসের ক্লাবটিতে ৪৮ ম্যাচে করেছেন ৪৪ গোল। সর্বশেষ ফিফা বিশ্বকাপের ফাইনালে হ্যাটট্রিক করা এমবাপ্পে এবার ইউরোর সেমিফাইনাল-ফাইনালেও যদি এমন ইতিহাস গড়েন, তবে ব্যালন ডি’অর ছুটবে তার দিকেও।
আরেকজন সম্ভাব্য প্রার্থী হলেন রদ্রি। ম্যানচেস্টার সিটিতে খেলা এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার ক্লাবে কাটিয়েছেন দুর্দান্ত এক মৌসুম, খেলছেন ইউরোতেও। সিটির হয়ে ১২ গোল ও ১৫ অ্যাসিস্ট করা রদ্রি মৌসুমে জিতেছেন প্রিমিয়ার লিগ, ক্লাব বিশ্বকাপ ও উয়েফা সুপার কাপ। স্পেন যদি ইউরোর ট্রফি জেতে, তবে ২৮ বছর বয়সি এই মাঝমাঠের তারকা হয়ে উঠবেন বড় দাবিদার।
অন্যান্য নাম
তাদের বাইরে হ্যারি কেইন, ফিল ফোডেন, টনি ক্রুস আর লিওনেল মেসিও রয়েছেন। কিন্তু পরিস্থিতি এখন এমন যে, কাউকেই স্পষ্টভাবে এগিয়ে রাখা যাচ্ছে না। এক ভিনিসিয়ুসের কোপা-ব্যর্থতা ও ইউরোর শেষের অনিশ্চয়তা পাল্টে দিচ্ছে ব্যালন ডি’অর সমীকরণ।