চোখে জল আর ভারী কণ্ঠ নিয়ে লুইস সুয়ারেস তার ১৭ বছরের আন্তর্জাতিক ফুটবল ক্যারিয়ারের ইতি টানার ঘোষণা দিয়েছেন। ৩৭ বছর বয়সী এই উরুগুইয়ান তারকা শুক্রবার প্যারাগুয়ের বিপক্ষে কোপা আমেরিকার বাছাই পর্বে জাতীয় দলের হয়ে শেষবারের মতো মাঠে নামবেন। সুয়ারেসের এই সিদ্ধান্ত কিছুটা পূর্বানুমান করা হলেও, তার বিদায়ের ঘোষণায় ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে নাড়া দিয়েছে।
সুয়ারেসের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার: এক ঐতিহাসিক যাত্রা
সুয়ারেস ২০০৭ সালে উরুগুয়ের জাতীয় দলের হয়ে প্রথম ম্যাচ খেলেন, যেখানে তার দল ৩-১ গোলের ব্যবধানে কলম্বিয়াকে পরাজিত করে। এরপর থেকে প্রায় দেড় দশক ধরে তিনি জাতীয় দলের অপরিহার্য সদস্য হিসেবে খেলে গেছেন। উরুগুয়ের সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসেবে ১৪২ ম্যাচে ৬৯ গোল করে তিনি জাতীয় দলের ইতিহাসে নিজের নাম উজ্জ্বল করেছেন।
২০১০ বিশ্বকাপ: সুয়ারেসের অবিস্মরণীয় মুহূর্ত
সুয়ারেসের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা মুহূর্ত ছিল ২০১০ বিশ্বকাপে। তিনি উরুগুয়েকে সেমি-ফাইনালে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তবে সেই বিশ্বকাপে ঘানার বিপক্ষে কোয়ার্টার-ফাইনালে তার হাত দিয়ে গোল বাঁচানোর ঘটনা আজও সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। সুয়ারেস অবশ্য বরাবরই দাবি করেছেন, দেশের জন্য তিনি সঠিক কাজটিই করেছিলেন।
কোপা আমেরিকা ২০১১: সুয়ারেসের ক্যারিয়ারের সেরা অর্জন
লিভারপুল, বার্সেলোনা, আতলেতিকো মাদ্রিদের মতো ক্লাবে খেলা সুয়ারেসের ক্যারিয়ারের সেরা অর্জন হিসেবে তিনি ২০১১ সালের কোপা আমেরিকার শিরোপা জয়কে উল্লেখ করেছেন। সেই টুর্নামেন্টে তার চারটি গোল এবং দুটি গোলে সহায়তা করে উরুগুয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়। সুয়ারেস বলেন, “ক্যারিয়ারের অনেক শিরোপা জিততে পেরে আমি সৌভাগ্যবান, কিন্তু কোপা আমেরিকার শিরোপার সঙ্গে কিছুই তুলনা করা যায় না।”
বিদায়ের সিদ্ধান্ত: মানসিক শান্তি ও গর্বের অনুভূতি
সুয়ারেস জানিয়েছেন, তিনি গর্বিত যে, তিনি নিজেই অবসর নেওয়ার সঠিক সময় নির্ধারণ করতে পেরেছেন। তিনি বলেন, “বিদায় বলা কখনোই সহজ নয়। তবে এই মানসিক শান্তি আমার সঙ্গী যে, শেষ ম্যাচ পর্যন্ত নিজের সবটুকু উজাড় করে দিয়েছি।”
শেষ ম্যাচ: পরিবারের জন্য এক বিশেষ উপহার
জাতীয় দলের হয়ে কানাডার বিপক্ষে কোপা আমেরিকার তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে সুয়ারেসের শেষ গোলটিও ছিল স্মরণীয়। ৯০ মিনিটের শেষে যোগ করা সময়ে গোল করে উরুগুয়েকে সমতায় ফেরান তিনি। সুয়ারেস বলেন, “আমার স্বপ্ন ছিল, আমার সন্তানদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু জিতে দেখানো। শেষ গোলটি ছিল তাদের জন্য বিশেষ উপহার।”
ভবিষ্যত পরিকল্পনা: ক্লাব ফুটবলে শেষ অধ্যায়
জাতীয় দল থেকে অবসর নেওয়ার পরও সুয়ারেস ইন্টার মায়ামি ক্লাবে তার ক্লাব ক্যারিয়ার চালিয়ে যাবেন। ইতিমধ্যে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন যে, ইন্টার মায়ামিই তার শেষ ক্লাব হবে। এই ক্লাবে খেলার মাধ্যমে সুয়ারেস তার ফুটবল ক্যারিয়ারের শেষ অধ্যায় সম্পন্ন করবেন।
লুইস সুয়ারেসের বিদায় শুধু উরুগুয়ের জন্যই নয়, বিশ্ব ফুটবলের জন্যও এক বড় অধ্যায়ের সমাপ্তি। তার দীর্ঘ ১৭ বছরের ক্যারিয়ার ফুটবলপ্রেমীদের মনে চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে।