ইউরো কাপের উত্তেজনাময় শুরু: জার্মানির মুখোমুখি স্কটল্যান্ড, কারা হবে চ্যাম্পিয়নের দাবিদার?

ইউরো কাপের উত্তেজনাময় শুরু: জার্মানির মুখোমুখি স্কটল্যান্ড, কারা হবে চ্যাম্পিয়নের দাবিদার?

কাতারে অনুষ্ঠিত জাঁকজমকপূর্ণ ফুটবল বিশ্বকাপের দু’বছর পর, এবার ইউরো কাপের মঞ্চ প্রস্তুত। এই প্রতিযোগিতা ফুটবলের অন্যান্য টুর্নামেন্টের চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে থাকে সবসময়। প্রথম ম্যাচে মিউনিখে জার্মানি এবং স্কটল্যান্ডের মুখোমুখি লড়াই দেখবে বিশ্ব, এবং শুক্রবার থেকেই শুরু হবে ফুটবলপ্রেমীদের রাত জাগার পালা।

ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর পর্তুগাল, কিলিয়ান এমবাপের ফ্রান্স, হ্যারি কেনের ইংল্যান্ড, এবং তিন বারের বিজয়ী স্পেন ইউরো কাপে প্রতিযোগিতার শীর্ষ দাবিদার। তবে ইউরো কাপ প্রতি আসরে নতুন চমক নিয়ে আসে। ২০০৪ সালে গ্রিসের অপ্রত্যাশিত জয় এবং ১৯৯২ সালে ডেনমার্কের অবাক করা জয় এর উদাহরণ। এবারেও কোনও দেশ আবার সবাইকে চমকে দিতে পারে।

শিরোনাম: জার্মানিতে ইউরো কাপের মহাযজ্ঞ

২০০৬ সালের পর এই প্রথম জার্মানি আবার একটি বড় ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজক হয়েছে, এবার তারা ইউরো কাপের আয়োজন করছে। বিগত ১৮ বছরের অভিজ্ঞতাকে পুনরায় উজ্জীবিত করার প্রয়াস পরিলক্ষিত হচ্ছে। দেশটিতে ইতিমধ্যেই লক্ষ লক্ষ দর্শক সমবেত হয়েছে এবং প্রতিটি স্টেডিয়াম ভরপুর থাকার সম্ভাবনা প্রবল। তবে ইউরোপের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবার ভিন্ন, বিশেষত রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের পর প্রথমবারের মতো ইউরো আয়োজিত হচ্ছে।

যুদ্ধের পর থেকে ইউক্রেন দল জার্মানিকে তাদের ঘরের মাঠ হিসেবে গ্রহণ করেছে এবং তাদের প্রতি জার্মানি উষ্ণ স্বাগত জানিয়েছে। অন্যদিকে, উয়েফা রাশিয়াকে নির্বাসন দিয়েছে।

বিশ্ব রাজনীতিতে উত্তাপ: ইউরোপের টালমাটাল অবস্থা

জর্জিয়া প্রথমবারের মতো বড় কোনো প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে, এবং সে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন বিশৃঙ্খলায় জর্জরিত। সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতাকে চ্যালেঞ্জ করে নতুন বিতর্কিত আইন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দেওয়ার প্রতি অনীহার কারণে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে জনগণ রাস্তায় প্রতিবাদ করছে।

জার্মানিও একই সমস্যায় ভুগছে, বিভিন্ন দেশ থেকে আসা অভিবাসীদের কারণে আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই অভিবাসীরা না শুধুমাত্র পরিবেশ দূষণ করছে, বরং স্থানীয় নাগরিকদের অপমান করছে, যা জার্মানিতেও সরকার বিরোধী মনোভাবের উত্থান ঘটিয়েছে। ইজরায়েলের হামলা এবং গাজার সংঘাতের মধ্যেই ইউরোপের অনেক দেশ প্রায় একই রকম অস্থির পরিস্থিতি দেখছে, এবং এর মাঝেই চলছে ইউরো কাপের আয়োজন।

ফুটবল ‘হুলিগান’দের তাণ্ডব

ফুটবল ‘হুলিগান’রা পিছিয়ে নেই। ঝামেলা বাঁধাতে তাঁরা সিদ্ধহস্ত। বিভিন্ন দেশের কট্টর সমর্থকেরা দলে দলে জার্মানির বিভিন্ন শহরে গেছেন। প্রিয় দলকে সমর্থন করা ছাড়াও, বিপক্ষকে ‘সমঝে’ দেওয়ার দায়িত্বও তাঁদের উপর। পরিস্থিতি সামলাতে জার্মানি কড়া হয়েছে। প্রতিযোগিতার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে ২০ হাজার পুলিশ। যেকোনো পরিস্থিতি সামলাতে সেনাবাহিনীকেও প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।

গতবার রানার্স আপ ইংল্যান্ড এবার ট্রফির দাবিদার হিসেবে নামবে। তিন বছর আগে ইতালির বিরুদ্ধে পেনাল্টি শুটআউটে অল্পের জন্য মন ভেঙেছিল তাদের। ১৯৬৬ সালের পর প্রথমবার ফুটবলে কোনো বড় ট্রফি জিততে তারা মরিয়া। কোচ গ্যারেথ সাউথগেটের অধীনে ইংল্যান্ড দলের অনেকটাই উন্নতি হয়েছে। জুড বেলিংহ্যাম, ফিল ফডেন তারকা হয়ে উঠেছেন। সাথে হ্যারি কেন তো আছেনই। গত বছর থেকে বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে খেলছেন হ্যারি কেন। ৪৭টি ম্যাচে ৪৪টি গোল করেছেন।

বিশ্বকাপ ফাইনালে ফ্রান্স হারলেও ইউরোতে নতুন উদ্যমে নামছে তারা। কিলিয়ান এমবাপে বিশ্বকাপ, নেশন্‌স লিগ জিতলেও ইউরো কাপ জেতেননি। দলে এবার অঁরেলিয়ে চুয়ামেনি, এডুয়ার্ডো কামাভিঙ্গার মতো তরুণ তারকা আছেন।

ইউরো ২০২৪: রোনাল্ডোর প্রত্যাবর্তন ও জার্মানির আশার আলো

সৌদি আরবে ক্লাব ক্যারিয়ার শুরু করার পর, এই প্রথম রোনাল্ডো বড় কোনও প্রতিযোগিতায় নামছেন। ৩৯ বছর বয়সেও তার ফর্ম দেখে বোঝা যাচ্ছে না। পর্তুগালের যোগ্যতা অর্জন পর্বে তিনি ১০টি গোল করেছেন এবং প্রস্তুতি ম্যাচেও গোল পেয়েছেন।

যদিও সাম্প্রতিক বড় প্রতিযোগিতায় জার্মানি হতাশ করেছে, কিন্তু দেশের মাটিতে ইউরোতে তাদের পিছিয়ে রাখা যাবে না। প্রস্তুতি ম্যাচে ফ্রান্স এবং নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে জয় পেয়েছে জার্মানি। পুরো দেশ আবার আশা দেখতে শুরু করেছে। ইউরোপ সেরার খেতাব ধরে রাখতে নামবে ইটালিও।

এক মাসের ফুটবল যুদ্ধ শেষে কে জিতবে তা বলা কঠিন, কিন্তু এ বারের ইউরো প্রতিযোগিতা বাকিগুলির থেকে আলাদা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখেছে উয়েফা এবং আয়োজক জার্মানি। গোটা বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীরা সেই আনন্দ উপভোগ করতে মুখিয়ে আছেন।

আপনিও পছন্দ করবেন
লেখক সম্পর্কে

১৯৮৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন রাজেশ কুমার, সাধারণ খেলার ক্ষেত্রে দশকেরও বেশি বিশেষজ্ঞতা সম্পন্ন অভিজ্ঞতা সহ এক পুরস্কৃত প্রাধিকর্তা। ২০০৮ সালে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে খেলার বিজ্ঞানে স্নাতক সমাপ্ত করার পর, কুমার ভারতবর্ষের বিভিন্ন খেলার একাডেমির সাথে সম্পর্কিত হয়েছেন, প্রশিক্ষণ প্রদান করেছেন এবং পরামর্শ দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়াগুলির মাধ্যমে করে, তিনি তার অভ্যাসে বৈশ্বিক পদ্ধতিগুলি অবলম্ব করেছেন। রাজেশ বর্তমানে সাংবাদিকতায় নিযুক্ত, দৈনন্দিন খেলাধুলা নিয়ে নিবন্ধ লেখেন এবং Betting.BC.Game-এর প্রধান সম্পাদক।

আপনার মন্তব্য ছেড়ে দিন
সবাই আপনার মন্তব্য দেখতে পাবেন