
কাউন্টিতে অ্যাকশন প্রশ্নবিদ্ধ, এরপর ইসিবি ও আইসিসির ব্যান
২০২৪ সালে সারের হয়ে কাউন্টি ক্রিকেট খেলতে গিয়েই সাকিব আল হাসানের বোলিং অ্যাকশন নিয়ে প্রথম প্রশ্ন ওঠে।
ডিসেম্বরে লাফবরো বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষায় তার অ্যাকশন অবৈধ প্রমাণিত হলে ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) নিজেদের সব টুর্নামেন্টে তার বোলিং নিষিদ্ধ করে। আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও তাকে বোলিং করা থেকে সাময়িকভাবে বিরত থাকতে হয়, ফলে তিনি কেবল ব্যাটার হিসেবে নাম লেখাতে পারতেন।
‘কিছুটা ইচ্ছা করেই করেছি’—পডকাস্টে খোলামেলা স্বীকারোক্তি
রবিবার ইউটিউবে ‘বিয়ার্ড বিফোর উইকেট’ পডকাস্টে হাশিম আমলার সঙ্গে আড্ডায় সাকিব স্বীকার করেন, সারের হয়ে খেলার সময় কিছুটা ইচ্ছা করেই অবৈধ অ্যাকশনে বোলিং করেছিলেন।
তার ভাষায়, শরীরিক ক্লান্তি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে স্বাভাবিক রিদমে বল করা সম্ভব হচ্ছিল না, আর তখনই অ্যাকশন ভেঙে যেতে শুরু করে, যার অংশটা তিনি নিজেও সচেতনভাবে মেনে নিয়েছিলেন।
টনটনে ৭০ ওভার, ক্যারিয়ারের সবচেয়ে ভারী স্পেল
সারের হয়ে সমারসেটের বিপক্ষে টনটনে চার দিনের ম্যাচেই মূল সমস্যা হয়।
সে টেস্টসুলভ ম্যাচে দুই ইনিংস মিলিয়ে তিনি ৬৩.২ ওভার বোলিং করেন—৩৩.৫ ওভার প্রথম ইনিংসে, ২৯.৩ ওভার দ্বিতীয়টিতে। সাকিব বলেন, টেস্ট ক্যারিয়ারেও কখনও এক সিরিজে এত লম্বা স্পেল বোলিং করেননি, এখানে প্রায় ৭০ ওভার বল হাতে নেওয়ায় ক্লান্তি চরমে পৌঁছে গিয়েছিল।
পাকিস্তান সিরিজের পর সরাসরি ইংল্যান্ডে, শরীরে চরম চাপ
এর আগে পাকিস্তানের বিপক্ষে পরপর দুইটি টেস্ট খেলেই তিনি ইংল্যান্ডে উড়ে যান।
সেই সিরিজ জয়ের পর পর্যাপ্ত বিশ্রাম ছাড়াই আবার চার দিনের ম্যাচে লম্বা স্পেল, ফলে শরীরের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। সাকিবের মনে হয়েছিল আম্পায়ার হয়তো আগে থেকে সতর্ক করবেন, কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী তারা সরাসরি পদক্ষেপ নিতে পারেন—এ বিষয়টি তিনি মেনে নিয়েছেন, কোনো অভিযোগও করেননি।
টেস্টে ব্যর্থ, চেন্নাইতেও অকৃতকার্য, তারপর আবার লাফবরো
প্রথম লাফবরো পরীক্ষায় ব্যর্থ হওয়ার পর রিপোর্ট দেখে তিনি বুঝতে পারেন, কোথায় কোথায় সমস্যা হচ্ছে।
এর মাঝে চেন্নাইয়ে করানো পরীক্ষাতেও তিনি পাস করতে পারেননি, যা তার বোলিংয়ে ফেরার পথ আরও কঠিন করে দেয়। এই ব্যর্থতার পরই বিসিবির নির্বাচকেরা তাকে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দল থেকে বাদ দেন, যদিও বোর্ড স্পষ্ট জানায়—ব্যাটার হিসেবে তিনি ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলতে পারবেন।
সারে ও অনুশীলনের পরিকল্পনা, তৃতীয় পরীক্ষায় অবশেষে সাফল্য
অ্যাকশন ঠিক করতে কিছু সপ্তাহ অনুশীলনের প্রয়োজন ছিল বলে জানান সাকিব।
তিনি আবার সারের কাছে ফিরে যান, যেখানে ক্লাব তাকে আলাদা সেশন দিয়ে সহায়তা করে। মাত্র দুইটি গঠনমূলক বোলিং সেশনের পরই তার ধারণা হয়, সমস্যাটা খুব কঠিন নয়—সঠিক গাইডলাইন পেলে ঠিক করা সম্ভব।
তৃতীয়বারের মতো পরীক্ষায় অংশ নিয়ে অবশেষে তিনি কৃতকার্য হন এবং অবৈধ বোলিং অ্যাকশনের দাগ মুছে যায়।
এখন ফ্রিলি বোলিং, টি–টোয়েন্টিতে নতুন অধ্যায়
অ্যাকশন শুদ্ধ করার পর বর্তমানে তিনি আরব আমিরাতের ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট ইন্টারন্যাশনাল টি–টোয়েন্টি লিগে খেলছেন এমআই এমিরেটসের হয়ে।
শারজা ওয়ারিয়র্সের বিপক্ষে অভিষেক ম্যাচেই তার দল ৪ রানে জেতে। সেই ম্যাচে সাকিব ব্যাট হাতে ১২ বলে ১৬ রান করেন, পরে কৌশলগত সিদ্ধান্তে তাকে রিটায়ার্ড আউট করা হয়—স্বীকৃত টি–টোয়েন্টিতে দ্বিতীয় কোনো বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে এই অভিজ্ঞতা হল তার, প্রথমজন ছিলেন সানজামুল ইসলাম।
ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্ট নিয়ে বার্তা
পুরো ঘটনাটার অভিজ্ঞতা থেকে সাকিবের উপলব্ধি—অতিরিক্ত ম্যাচ, কম বিশ্রাম আর ভারী স্পেলের কারণে যে কোনো বোলারের অ্যাকশন ও ফিটনেস দুটোই ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।
তাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ও লিগগুলোতে ওয়ার্কলোড ও শিডিউল ম্যানেজমেন্ট যে কতটা জরুরি, তার বাস্তব উদাহরণ এখন নিজেই—এ কথা পডকাস্টে পরোক্ষভাবে সামনে এনেছেন বাংলাদেশের এই সিনিয়র অলরাউন্ডার।