
আইপিএল নিলামের চূড়ান্ত তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদ, রিশাদ হোসেন, তানজিম হাসান, নাহিদ রানা, রকিবুল হাসান ও শরিফুল ইসলাম – মোট সাতজন বাংলাদেশি ক্রিকেটার। তবে প্রাথমিক নিবন্ধনে থাকা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত তালিকায় থাকছেন না সাকিব আল হাসান, অর্থাৎ আপাতত ভারতের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে তার ফেরার সুযোগ মিলছে না।
প্রাথমিক লিস্টে নাম তোলা যে কোনো ক্রিকেটারের জন্যই উন্মুক্ত থাকে, কিন্তু নিলামে অংশ নিতে পারে কেবল দলগুলোর পছন্দের তালিকায় ঢোকা ক্রিকেটারেরা। এবার প্রথম ধাপে নাম নিবন্ধন করেছিলেন ১,৩৯০ জন, সেখান থেকে বাছাই হয়ে চূড়ান্ত তালিকায় জায়গা পেয়েছেন মাত্র ৩৫০ cricketer – তাদের মধ্যেই রয়েছেন বাংলাদেশের এই সাতজন।
মুস্তাফিজদের সঙ্গে তালিকায় চমক – রকিবুল হাসান
চূড়ান্ত তালিকায় মুস্তাফিজের পাশাপাশি আছেন তাসকিন, রিশাদ, তানজিম, নাহিদ ও শরিফুল। তবে সবচেয়ে বড় চমক নিঃসন্দেহে রকিবুল হাসান।
২০২০ অনূর্ধ্ব–১৯ বিশ্বকাপজয়ী এই বাঁহাতি স্পিনার এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে একটিও ম্যাচ খেলেননি। আন্তর্জাতিক মঞ্চে তার অভিষেক হয়েছে ২০২৩ এশিয়ান গেমসে তিনটি টি-টোয়েন্টি খেলে, কিন্তু সেগুলো আনুষ্ঠানিক আন্তর্জাতিক ম্যাচ হিসেবে গণ্য হয়নি, কারণ সেখানে মূল জাতীয় দল অংশ নেয়নি।
যুব পর্যায়ের পর রকিবুল নিয়মিতই খেলছেন ঘরোয়া ক্রিকেটে; ইমার্জিং দল, হাই পারফরম্যান্স ইউনিট ও বাংলাদেশ ‘এ’ দলের স্কোয়াডেও তাকে প্রায়ই দেখা যাচ্ছে। পারফরম্যান্সও মোটামুটি ধারাবাহিক। তবে বিপিএলে এখনো ঝকঝকে রেকর্ড গড়তে পারেননি – ২২ ম্যাচে তার উইকেট ১৬টি; শেষ আসরে ৯ ম্যাচে ৫ উইকেট, ওভারপ্রতি রান দিয়েছেন সাড়ে আটেরও বেশি।
সব মিলিয়ে টি–টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত ৬৯ ম্যাচে ৬৯ উইকেট পেয়েছেন তিনি, ইকোনমি রেট ৬.৯০। দেশের বাইরের কোনো লিগে এখনও খেলেননি, তাই সরাসরি আইপিএলের চূড়ান্ত তালিকায় তার নাম ওঠা স্বাভাবিকভাবেই কৌতূহল তৈরি করেছে।
নিলামের কাঠামো: কতজন বিদেশি, কতজন পাবেন দল?
৩৫০ জনের এই চূড়ান্ত তালিকার মধ্যে ভারতীয় ক্রিকেটার আছেন ২৪০ জন, বিদেশি ক্রিকেটার ১১০ জন। তবে নিলামে সর্বোচ্চ দল পেতে পারেন মাত্র ৭৭ জন, আর বিদেশি খেলোয়াড়দের জন্য ফাঁকা সlots আছে ৩১টি।
ভারতীয় ২৪০ ক্রিকেটারের মধ্যে ২২৪ জনই আনক্যাপড। বিদেশি আনক্যাপড ক্রিকেটারদের সংখ্যা আরও কম – রকিবুলসহ মোট ১৪ জন।
যেসব ক্রিকেটার কখনও জাতীয় দলে খেলেননি, কিংবা সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে কেটে গেছে পাঁচ বছর, অথবা পাঁচ বছর ধরে কেন্দ্রীয় চুক্তিতে নেই – তাদের আনক্যাপড হিসেবেই ধরা হয়।
মুস্তাফিজ সর্বোচ্চ ভিত্তিমূল্যে, অন্যদের বেস প্রাইস কম
মুস্তাফিজুর রহমান নিজেকে রেখেছেন সর্বোচ্চ ভিত্তিমূল্যের ক্যাটাগরিতে, যেখানে বেস প্রাইস ২ কোটি রুপি। এই ব্র্যাকেটে আছেন মোট ৪০ ক্রিকেটার।
আইপিএলে ইতোমধ্যে আট মৌসুম খেলেছেন মুস্তাফিজ। গত মেগা নিলামে কোনো দল না পেলেও পরবর্তীতে জেইক ফ্রেজার-ম্যাকগার্কের বদলি হিসেবে জায়গা পান দিল্লি ক্যাপিটালসে, যেখানে তিন ম্যাচে নেন ৪ উইকেট। তার আগের মৌসুমে চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে ৯ ম্যাচ খেলে উইকেট ছিল ১৪টি। সব মিলিয়ে আইপিএলে এখন পর্যন্ত ৬০ ম্যাচে ৬৫ উইকেট নিয়েছেন তিনি, ইকোনমি ৮.১৩।
৩০ বছর বয়সী এই পেসার বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরাতে আইএল টি–টোয়েন্টি লিগে খেলছেন এবং প্রথম দুই ম্যাচেই ভালো বোলিং করেছেন। জাতীয় দল ও ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে সাম্প্রতিক সাফল্য বিবেচনায় নিলামে তার প্রতি আগ্রহ থাকারই কথা। তবে তিনি আছেন ফাস্ট বোলারদের দ্বিতীয় সেটে; প্রথম সেটে থাকলে সুযোগ আরও কিছুটা বাড়ত বলে মনে করা হচ্ছে।
৭৫ লাখ রুপি বেস প্রাইসের ক্যাটাগরিতে রয়েছেন তাসকিন, রিশাদ, তানজিম, শরিফুল ও নাহিদ রানা।
– স্পিনারদের দ্বিতীয় সেটে আছেন বিগ ব্যাশে খেলতে যাওয়া লেগস্পিনার রিশাদ হোসেন।
– ফাস্ট বোলারদের তৃতীয় সেটে তাসকিন, চতুর্থ সেটে তানজিম ও নাহিদ, আর পঞ্চম সেটে থাকবেন শরিফুল।
আনক্যাপড স্পিনারদের চতুর্থ সেটে রাখা হয়েছে রকিবুলকে, তার ভিত্তিমূল্য ৩০ লাখ রুপি।
সব মিলিয়ে বাস্তবতা হলো, মুস্তাফিজ ছাড়া অন্য কারও দল পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই সীমিত। ধারণা করা হচ্ছে, মুস্তাফিজ ও রিশাদের নামই হয়তো নিলামে কার্যত উঠে আসবে; অন্যদের নাম ওঠার আগেই অধিকাংশ ফ্র্যাঞ্চাইজি তাদের স্কোয়াড পূর্ণ করে ফেলতে পারে।
কবে হবে নিলাম?
এবারের আইপিএল নিলাম অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৬ ডিসেম্বর, আবু ধাবিতে। এখন দেখার বিষয়, বাংলাদেশের এই সাতজনের মধ্যে কার ভাগ্যে হাসে আইপিএলের দল – নাকি সব আলো আবারও মুস্তাফিজুর রহমানের দিকেই ঘুরে দাঁড়ায়।