যেসব বিষয় বিবেচনায় রেখে ক্রিকেটারদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় চুক্তি করে বিসিসিআই

ভারতের ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিসিসিআই (BCCI) প্রতি বছর দেশের শীর্ষ ক্রিকেটারদের জন্য চারটি গ্রেডে কেন্দ্রীয় চুক্তি ঘোষণা করে। এই চুক্তির মাধ্যমে জাতীয় দলের মূল ক্রিকেটাররা আনুষ্ঠানিকভাবে বোর্ডের অধীনে থেকে বার্ষিক বেতন পান। তবে কে কোন গ্রেডে থাকবে, কত বেতন পাবে—তা নির্ভর করে তিন ফরম্যাটে তার অবদান, পারফরম্যান্স ও ভূমিকার ওপর।

সর্বশেষ কেন্দ্রীয় চুক্তি ঘোষণা হয়েছে ২০২৫ সালের এপ্রিলে। আসছে চক্রে, বিশেষ করে দুই ফরম্যাটের অধিনায়ক শুভমান গিলের বেতন ও গ্রেড বাড়তে পারে বলে জোর আলোচনা রয়েছে।

কী উদ্দেশ্যে এই কেন্দ্রীয় চুক্তি?

কেন্দ্রীয় চুক্তির মূল লক্ষ্য তিনটি:

  • পারফরম্যান্সকে পুরস্কৃত করা
  • বিশেষ করে টেস্ট ক্রিকেটে অংশগ্রহণে উৎসাহ দেওয়া
  • স্কোয়াডের মধ্যে সর্বোচ্চ পেশাদার মান বজায় রাখা

বিসিসিআইয়ের চুক্তি কাঠামো চারটি গ্রেডে ভাগ করা হয়—এ প্লাস (A+), এ (A), বি (B) এবং সি (C)। প্রতিটি গ্রেডের জন্য নির্ধারিত একটি স্থায়ী বার্ষিক রিটেইনার ফি থাকে। একজন ক্রিকেটার পুরো বছরে যত ম্যাচই খেলুন না কেন, এই টাকার পরিমাণ আলাদা, ম্যাচ ফি এর সঙ্গে এর কোনো যোগ নেই। ম্যাচ ফি প্রতিটি ম্যাচ অনুযায়ী আলাদাভাবে দেওয়া হয়।

গ্রেড নির্ধারণ হয় বছরে একবার। বিসিসিআই সিলেকশন কমিটি, হেড কোচ ও অধিনায়কের সঙ্গে আলোচনা করেই শেষ সিদ্ধান্ত নেয়।

কোন মানদণ্ডে নির্ধারণ হয় গ্রেড?

১. ফরম্যাট অগ্রাধিকার ও অংশগ্রহণ

ঐতিহ্যগতভাবে টেস্ট ক্রিকেটে দারুণ পারফরম্যান্স ও প্রতিশ্রুতি দেখানো ক্রিকেটাররা উচ্চ গ্রেডে (এ প্লাস ও এ) থাকার বেশি সুযোগ পান। এ প্লাস গ্রেড আসলে খুব বিশেষ একটি ক্যাটাগরি, যেখানে সাধারণত এমন ক্রিকেটাররাই থাকেন যারা সব ফরম্যাটে (টেস্ট, ওয়ানডে, টি–টোয়েন্টি) নিয়মিত খেলেন ও দলের মূল ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত।

ভারতের টেস্ট ও ওয়ানডে অধিনায়ক শুভমান গিলকে আগামী চক্রে এই এ প্লাস ক্যাটাগরিতে তোলার কথা ভাবা হচ্ছে। এমনটা হলে তিনি বছরে ৭ কোটি রুপি পর্যন্ত বেতন পেতে পারেন, যা বর্তমানে সর্বোচ্চ রিটেইনার স্ল্যাব।

২. পারফরম্যান্স ও ধারাবাহিকতা

গত চুক্তি–চক্রে একজন ক্রিকেটার কেমন পারফরম্যান্স করেছে, কতটা ধারাবাহিক ছিল, গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে কতটা প্রভাব ফেলেছে—এসবও বড় ভূমিকা রাখে।

  • দীর্ঘদিনের ধারাবাহিক ভালো পারফরম্যান্সে গ্রেড উন্নীত হয়
  • ফর্মহীনতা, ইনজুরি বা ফিটনেস সমস্যার কারণে কেউ কেউ গ্রেড কমিয়ে দিতে পারে

অর্থাৎ শুধু নাম নয়, মাঠের বাস্তব অবদানই শেষ পর্যন্ত গ্রেড ঠিক করে দেয়।

৩. ন্যূনতম ম্যাচ খেলার শর্ত

যে গ্রেডই হোক—এ, বি বা সি—কেন্দ্রীয় চুক্তির তালিকায় আসতে হলে নির্দিষ্ট সংখ্যক আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতেই হবে। উদাহরণ হিসেবে ধরা হয়:

  • অন্তত ৩টি টেস্ট, অথবা
  • ৮টি ওয়ানডে, অথবা
  • ১০টি টি–টোয়েন্টি

তবে শুধু বেশি ম্যাচ খেললেই যে সরাসরি উচ্চ গ্রেড মিলবে, তা নয়। ম্যাচ সংখ্যার সঙ্গে পারফরম্যান্স ও গুরুত্ব—দুটোই বিবেচনায় থাকে।

৪. ঘরোয়া ক্রিকেটে অংশগ্রহণ

সাম্প্রতিক সময়ে বিসিসিআই ঘরোয়া ক্রিকেটকে খুব গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে, বিশেষ করে লাল বলের রঞ্জি ট্রফিকে। বোর্ডের অবস্থান স্পষ্ট:

  • জাতীয় দলে ব্যস্ত না থাকলে
  • কেন্দ্রীয় চুক্তির আওতায় থাকা ক্রিকেটারদের রঞ্জি বা অন্যান্য ঘরোয়া প্রতিযোগিতায় খেলতে হবে

এই নিয়ম অমান্য করায় আগেও শাস্তি হয়েছে—শ্রেয়াস আইয়ার ও ইশান কিশান ঘরোয়া ক্রিকেটে না খেলায় কেন্দ্রীয় চুক্তি হারিয়েছিলেন। তাই ভবিষ্যতে চুক্তি ধরে রাখতে চাইলে তারকা ক্রিকেটারদেরও ঘরোয়া ক্রিকেটে উপস্থিত থাকতে হচ্ছে।

রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলির গ্রেড কি কমবে?

বর্তমানে এ প্লাস গ্রেডে আছেন রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলি। তবে তারা টেস্ট ও টি–টোয়েন্টি দুই ফরম্যাট থেকেই সরে দাঁড়ানোর কারণে নতুন চক্রে তাদের গ্রেড এ–তে নামিয়ে দেওয়া হতে পারে—এমন গুঞ্জন জোরালো।

রবীন্দ্র জাদেজা যদিও টি–টোয়েন্টি থেকে অবসর নিয়েছেন, তিনি এখনও টেস্ট দলে একেবারেই অপরিহার্য। ব্যাট–বল–ফিল্ডিং তিন বিভাগেই তার অবদান অনেক বেশি, তাই ধারণা করা হচ্ছে তিনি এ প্লাস গ্রেডেই থাকতে পারেন।

যদি কোহলি ও রোহিতকে সত্যিই এ প্লাস থেকে এ গ্রেডে নামানো হয়, তাহলে আর্থিক দিকেও প্রভাব পড়বে। এ প্লাস গ্রেডে যে পরিমাণ রিটেইনার ফি, এ গ্রেডে তা সাধারণত ২ কোটি রুপি কম। অর্থাৎ সম্ভাব্য অবনমন হলে তাদের বার্ষিক বেতন নেমে দাঁড়াবে প্রায় ৫ কোটি রুপিতে।

সব মিলিয়ে, বিসিসিআইয়ের কেন্দ্রীয় চুক্তি শুধু নাম–খ্যাতির বিষয় নয়; তিন ফরম্যাটে অবদান, টেস্ট ক্রিকেটে প্রতিশ্রুতি, ঘরোয়া ম্যাচে উপস্থিতি ও ধারাবাহিক পারফরম্যান্স—সব কিছুর হিসাব কষেই নির্ধারিত হয় কে কত গ্রেডে থাকবে, আর কত টাকা পাবে।

লেখক সম্পর্কে

১৯৮৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন রাজেশ কুমার, সাধারণ খেলার ক্ষেত্রে দশকেরও বেশি বিশেষজ্ঞতা সম্পন্ন অভিজ্ঞতা সহ এক পুরস্কৃত প্রাধিকর্তা। ২০০৮ সালে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে খেলার বিজ্ঞানে স্নাতক সমাপ্ত করার পর, কুমার ভারতবর্ষের বিভিন্ন খেলার একাডেমির সাথে সম্পর্কিত হয়েছেন, প্রশিক্ষণ প্রদান করেছেন এবং পরামর্শ দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়াগুলির মাধ্যমে করে, তিনি তার অভ্যাসে বৈশ্বিক পদ্ধতিগুলি অবলম্ব করেছেন। রাজেশ বর্তমানে সাংবাদিকতায় নিযুক্ত, দৈনন্দিন খেলাধুলা নিয়ে নিবন্ধ লেখেন এবং Betting.BC.Game-এর প্রধান সম্পাদক।

আপনার মন্তব্য ছেড়ে দিন
সবাই আপনার মন্তব্য দেখতে পাবেন