
রাগান্বিত লিটন থেকে হাসিখুশি লিটন
এক সপ্তাহ আগের সংবাদ সম্মেলনে লিটন দাস ছিলেন গোমড়া মুখে, বেরিয়েছিলেন ক্ষোভ নিয়ে, এমনকি তার নেতৃত্ব টিকবে কি না সেটা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল।
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ শেষের দিনে চিত্রটা একেবারে বদলে যায় – মঙ্গলবার তিনি হেসেছেন, মজা করেছেন এবং নেতৃত্ব নিয়ে সংশয় উড়িয়ে বিশ্বকাপের স্বপ্নের কথা বলেছেন।
জয় আছে, অস্বস্তি রয়ে গেছে
সিরিজে পিছিয়ে থেকে জেতায় স্বস্তি তো এসেছে, নির্বাচকদের সঙ্গে দূরত্বও কিছুটা কমেছে।
তবু সব অস্বস্তি দূর হয়নি – বিশেষ করে দীর্ঘদিনের পুরোনো সমস্যা, মিডল অর্ডারের ব্যর্থতা।
মিডল অর্ডার রানহীন, কিন্তু জায়গা প্রায় নিশ্চিত
লিটনের ভাষায়, ‘বিশ্বকাপে ভালো খেললেই হলো’ – কথাটা তিনি বলেছেন এই সিরিজে রান না পাওয়া মিডল অর্ডার ব্যাটারদের নিয়ে।
এতে স্পষ্ট, যারা এখন মিডল অর্ডারে আছেন, তাদের জায়গা আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মোটামুটি নিশ্চিত, ফর্ম খারাপ হলেও খুব একটা ছাঁটাইয়ের ভাবনা নেই।
দীর্ঘদিনের নিষ্প্রভতা, আয়ারল্যান্ড সিরিজেও সমাধান নেই
বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি মিডল অর্ডার অনেক দিন ধরেই নিষ্প্রভ, মাঝেমধ্যে রান এলেও তা ম্যাচের ফল ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো হয় না।
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষেও এর ব্যতিক্রম দেখা যায়নি, তবে সিরিজ জয় অনেক রোগকেই আপাতত আড়াল করে রেখেছে।
প্রত্যাশিত সিরিজ জয়, কিন্তু ঘাটতি কি পূরণ হলো?
র্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে থাকা আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে সিরিজ জয় ছিল প্রত্যাশিত।
৩-০ তে জিতলেও তেমন বাড়তি কৃতিত্ব থাকত না, তাই ২-১ এ ফিরে আসাটা শুধু মনোবল বাড়িয়েছে, সমস্যার সমাধান করেছে – এমন বলা কঠিন।
বিশ্বকাপের আগে জেতার পাশাপাশি ঘাটতি মেটানো ছিল বড় প্রশ্ন, আর বাংলাদেশ দল আপাতত সেই প্রশ্নটাকে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে।
জাকের-সোহান ব্যর্থ, তবু অধিনায়ক খুব একটা চিন্তিত নন
প্রথম ম্যাচে জাকের আলী অনিক ব্যর্থ, তার জায়গায় দ্বিতীয় ম্যাচে সুযোগ পেয়ে আরও খারাপ করেন নুরুল হাসান সোহান।
শেষ ম্যাচে সোহানকেও বাইরে রাখা হয়। তবু লিটন বলছেন, তিনি খুব উদ্বিগ্ন নন – সবাইকে সময় দিতে চান।
তার যুক্তি, তোহিদ হৃদয়ও অনেক দিন ধরে সংগ্রাম করছিলেন, কিন্তু এই সিরিজে বড় রান করেছেন, মানে সামর্থ্য সবারই আছে।
শামীমের নাটকীয় ফেরা, অঙ্কনের কেবল ট্রফি ধরার সান্ত্বনা
দল থেকে বিতর্কিতভাবে বাদ পড়ে পরে নাটকীয়ভাবে একাদশে ফেরা শামীম হোসেন তৃতীয় ম্যাচে ব্যাট করার সুযোগই পাননি।
স্কোয়াডে শুরু থেকে থাকা মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন কোনো ম্যাচেই একাদশে জায়গা পাননি।
সিরিজ ট্রফি হাতে তোলার সময় তার হাতে কাপ তুলে দিয়ে ছবি তুলেছে দল – আপাতত এটাই তার প্রাপ্তি।
পরের আন্তর্জাতিক ম্যাচই যেহেতু বিশ্বকাপ, সেখানে অঙ্কনের থাকা খুবই কঠিন বলেই ধরে নেওয়া যায়।
এশিয়া কাপে ডুবে যাওয়া একই পুরোনো মিডল অর্ডার
সর্বশেষ বহুজাতিক আসর এশিয়া কাপে মিডল অর্ডারের ব্যর্থতাতেই ডুবে যায় বাংলাদেশ।
নিয়মিত ব্যর্থ হলেও বিকল্প তৈরি হয়নি, বিশেষজ্ঞ মিডল অর্ডার ব্যাটারের ঘাটতি তখনও যেমন ছিল, এখনো তেমনই আছে।
চলতি বছরে ৩০টা ম্যাচ খেলার পরও এই জায়গায় খুব একটা নতুন কিছু চেষ্টা করা হয়নি।
নতুনদের জন্য দরজা আধখোলা, তবু মূল ভরসা পুরোনো মুখই
লিটনের ভাবনা খুব পরিষ্কার – বিশ্বকাপে নতুন কাউকে “পরীক্ষা করে দেখার” দ্বিতীয় চিন্তা তার মাথায় আসেনি।
তার বিশ্বাস, যেসব খেলোয়াড় এখন দলে, তাদেরই সামর্থ্য আছে বিশ্বকাপ খেলার।
হ্যাঁ, কেউ যদি সামনে বিপিএলে অসাধারণ খেলেন, তার জন্য জায়গা খোলা থাকবে, তবে যারা এখন পারফর্ম করছেন, তাদের জায়গা থেকে সরানোও যাবে না – এটাও তিনি জোর দিয়ে বলেছেন।
সবচেয়ে বড় ভয়: চোট
বিকল্প না বাড়িয়ে মূলত বর্তমান গ্রুপকেই আঁকড়ে ধরতে চান লিটন।
তাই তার সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা চোট – তিনি খোলাখুলিই বলছেন, “দোয়া করুন, কারও যেন চোট না হয়।”
বিশ্বকাপ স্কোয়াড প্রায় গড়া, কিন্তু ব্যাটিং নিয়ে প্রশ্ন
আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ অভিযান।
এর প্রায় দুই মাস আগেই লিটন জানিয়ে দিলেন, স্কোয়াড মোটামুটি তৈরি হয়ে গেছে।
বোলিং আক্রমণ নিয়ে প্রশ্ন খুব কম, ১৫ জনের মধ্যে কারা থাকবেন তা এখনই বলা যায়।
স্থির দল, কিন্তু যদি পারফরম্যান্স না ওঠে…
সমস্যা বেশি ব্যাটিং লাইনআপে – নড়বড়ে, ধারাবাহিকতার অভাব, বিশেষ করে বড় ম্যাচ আর বহুজাতিক আসরে।
দ্বিপাক্ষিক সিরিজে সাফল্য এলেও বড় টুর্নামেন্টে বারবার ব্যর্থতা সেই সাফল্যকেই প্রশ্নের মুখে দাঁড় করায়।
অনেক আগে থেকে দল গড়ে রাখা, স্থির স্কোয়াড নিয়ে বিশ্বকাপে যাওয়া অবশ্যই ইতিবাচক –
কিন্তু পারফরম্যান্সের ঘাটতি থাকলে, সেই স্থিরতাই শেষ পর্যন্ত বুমেরাং হয়ে ফিরে আসতে পারে বাংলাদেশের জন্য।