নারী আম্পায়ার সাথিরা জাকিরের ম্যাচ পরিচালনা নিয়ে কি সত্যিই কোনো অসন্তোষ ছিল? প্রাইম ব্যাংক লিমিটেড ও মোহামেডানের মধ্যে অনুষ্ঠিত ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ নিয়ে এমন প্রশ্ন উঠেছিল। গভীর খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবাল এবং মাহমুদউল্লাহ সহ সবাই নারী আম্পায়ারের বিপক্ষে কোনো অভিযোগ জানাননি। বরং, তারা এটি পজিটিভভাবে গ্রহণ করেছেন এবং মুশফিক বলেছেন যে তিনি সাথিরা জাকিরের সাফল্যে খুবই আনন্দিত এবং তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
ক্রিকেট মাঠে নারী আম্পায়ারের অভিষেক নিয়ে বিতর্ক
মুশফিক উল্লেখ করেছেন যে, দুই ক্লাবের পক্ষ থেকে যা কিছু বলা হয়েছে, তা সাথিরা জাকির নারী আম্পায়ার হওয়ার কারণে নয়। বরং এটা বড় ম্যাচে লিগের কাউকে অন ফিল্ড আম্পায়ার হিসেবে অভিষেক দেখে হতে পারে। তিনি বলেছেন, “এটা যদি কোনো পুরুষ আম্পায়ারের অভিষেক হত, তাহলেও হয়তো প্রশ্ন উঠত।” জাতীয় দলের এই ক্রিকেটারের মতে, প্রশ্নগুলি নিরপেক্ষতার ভিত্তিতে উত্থাপিত হয়েছে।
একই সঙ্গে, মাহমুদউল্লাহ চট্টগ্রাম থেকে মুঠোফোনে হতাশ কণ্ঠে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, “ম্যাচ শেষে আমি সাথিরা জাকিরকে আরও অভিনন্দন জানিয়েছি এবং খুব ভালো আম্পায়ারিং এর জন্য সাধুবাদ দিয়েছি।” তিনি আরও বলেছেন, “আমি, মুশফিক, তামিম… আমরা এত বছর ধরে ক্রিকেট খেলছি, সবাই বুঝবেন যে আমরা এমন কিছ৳ বলার মানুষ নই।” মাহমুদউল্লাহ এটাও উল্লেখ করেন যে, এসব বলা বাংলাদেশের ক্রিকেট ও ক্রিকেটারদের ভাবমূর্তির জন্য ক্ষতিকর।
ক্রিকেট ক্লাবগুলোর অবস্থান ও মতামত প্রকাশ
প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব ও মোহামেডান ক্লাব উভয়েই সম্প্রতি একটি বিষয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে বলেছেন। প্রাইম ব্যাংক এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতি মাধ্যমে জানিয়েছে, তারা প্রগতি ও সকল লিঙ্গ, ধর্ম, বর্ণের মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। ম্যাচে আম্পায়ারদের কিছু ভুল সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ খেলোয়াড়দের অসন্তোষের মধ্যেও তাদের কোনো বিশেষ আম্পায়ারের অধীনে ম্যাচ খেলতে না চাওয়ার মত কোনো অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
মোহামেডান ক্লাবের পক্ষ থেকেও একই রকম মন্তব্য করা হয়েছে। তাদের ম্যানেজার তারিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, নারী আম্পায়ারের পরিচালনায় খেলতে তাঁদের কোনো আপত্তি ছিল না এবং এ নিয়ে কারও কাছে কোনো অভিযোগও করা হয়নি। বরং, পুরোটাই মনগড়া বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
মহিলা আম্পায়ার সঙ্গে দুটি ক্লাবের মধ্যে সংঘর্ষ: বিবাদের পেছনের কাহিনী
দুজনই বলেছেন, বড় ম্যাচ ছিল বলে এই ম্যাচে অভিজ্ঞ আম্পায়ার আশা করেছিল দুই ক্লাব। সাথিরা যদিও এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আম্পায়ারিং করেছেন, তবে প্রিমিয়ার লিগে এর আগে অন ফিল্ড আম্পায়ারিং করেননি। সে জন্যই মাঠে তাঁকে দেখে অবাক হয়েছিলেন তাঁরা। তবে এ নিয়ে কারও আনুষ্ঠানিক কোনো অভিযোগ ছিল না।
তাহলে দুই ক্লাব বা তাদের ক্রিকেটাররা নারী আম্পায়ারের পরিচালনায় খেলতে চান না—এ আলোচনার সূত্রপাত কোথা থেকে? এই বারুদে আগুনের স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়েছে আসলে বিসিবির আম্পায়ার্স কমিটির প্রধান ইফতেখার আহমেদের একটি বক্তব্য। সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেছেন, ‘বিসিবি মহিলা আম্পায়ার নিয়োগ করায় তারা (দুই ক্লাব) অসন্তুষ্ট হয়েছে।’ সঙ্গে যোগ করেছেন, ‘তারা (দুই ক্লাব) আমার কাছে অভিযোগ করেনি। তবে সিসিডিএমের কাছে অভিযোগ করেছে।’
কিন্তু ইফতেখার আহমেদের এমন বক্তব্যের দায় নিতে চাইছে না সিসিডিএম। সিসিডিএম প্রধান মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন চৌধুরী কাল প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘সিসিডিএমের কাছে কোনো ক্লাব বা ক্রিকেটার কোনো অভিযোগ করেনি এবং সিসিডিএমও এমন কোনো অভিযোগের কথা আম্পায়ার্স কমিটির কাউকে জানায়নি।’ একই কথা বলেছেন ম্যাচের দিন মাঠে থাকা সিসিডিএমের অন্য কর্মকর্তারাও।